চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে দলের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে যদি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার প্রচেষ্টা করা হয়, তাহলে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার ভাবনা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই না। তাদের ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। এ সময় তার সঙ্গে থাকা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি সম্মেলনের পর দলটির গঠনতন্ত্র কমিশনে জমা দেয়নি। এ বিষয়ে ইসি থেকে বিএনপিকে চিঠি দেয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে দলের গঠনতন্ত্র সিইসির কাছে দিতে যান নজরুল ইলসাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি নেতারা। তারা কমিশন থেকে বিভিন্ন নির্বাচনের আইন ও বিধির বইও নিয়ে যান।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে- এমন অভিযোগ তুলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। সেই পথে বাধা সৃষ্টি করার কিছু চক্রান্ত আমরা দেখছি। কোনো কারণ ছাড়াই, কোনো প্রমাণ ছাড়া আমাদের নেত্রীকে অভিযুক্ত করার প্রচেষ্টা হচ্ছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। আরও কিছু নিরীহ মানুষকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। সে রকম কিছু হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আকাক্সক্ষা বিঘিœত হবে। আমরা আশা করি, সে রকম কিছু হবে না। সবাই মিলে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারব। এ বিষয়ে কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। বিষয়টি এখন আদালতের।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ অংশ না নিলে ওই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় না। আমরা আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচনে যেতে চাই না। আমরা মনে করি, সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। অংশগ্রহণমূলক হবে। না হলে সেটা হবে নির্বাচনের নামে প্রহসন। আমরা প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নিতে চাই না। বিএনপি অংশ না নিলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। কমিশন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এ বিষয়গুলো আমাদের পক্ষ থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে।
সিইসির সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একটা বিষয় অনুভব করেছি, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি না হয়- এমন একটি ভাবনা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রয়েছে। কমিশনও মনে করে, বিএনপি অংশ না নিলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে না।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা ওই নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলাম। আমাদের প্রার্থীও ছিল। বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলাম। তবে এটা নির্বাচন কমিশন বন্ধ করেনি। আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়েছে। কাজেই তাদের কিছু করণীয় নেই। কমিশন বলেছে, যে কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে, সেই ধরনের কিছু ছিল না। সাধারণ মানুষ সন্দেহ করে সরকার পরাজয়ের ভয়ে ভীত হয়ে কৌশল থেকে এটা করেছে। এর থেকে মুক্ত হয়ে যা করার, কমিশন তা করবে বলে আশা করি।
সিইসির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাক্ষাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন।
২৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ