সোহানুল হক পারভেজ, নাগরিক তানোর : রাজশাহীর তানোর উপজেলায় আলু’র জমিতে সেচ দেয়ার ৫শ’ টাকা দিতে দেরি হওয়ায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকুপের লাইনম্যান কর্তৃক মারপিটের স্বীকার কৃষককেই জরিমানা করা হয়েছে।
গত রোববার বিকালে তানোর থানা চত্বরে এক শালিস বৈঠকে কৃষককের এই জরিমানা করা হয়। এঘটনায় এলাকার কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শি সুত্রে জানা গেছে, গত ১সপ্তাহ আগে কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত তরি মন্ডলের পুত্র আলহাজ সুলতান মন্ডল (৬৫) আলু’র জমিতে পানি নিয়ে যায়। এসময় গভীর নলকুপের অপারেটর আব্দুস সালামের লাইনম্যান মমিন উদ্দিন বাকি থাকা ৫শ’টাকা নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে লাইনম্যান তার পিতা মোস্তফাসহ তার লোকজনকে ডেকে নিয়ে সুলতান হাজিকে লোহার রড় দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর জখম করে। এঘটনায় উভয় পক্ষ তানোর থানায় পৃথক পৃথক ভাবে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তানোর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে গত রোববার বিকালে তানোর থানায় চত্বরে শালিস বৈঠক বসে। ওই শালিস বৈঠকে সুলতান হাজি টাকা পরিশোধ করলে এধরনের মারামারির ঘটনা ঘটতনা মর্মে কৃষক সুলতান হাজি মার খাওয়ার পরও তাকেই ১৪হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার বিষয়টি নিয়ে কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত প্রায় ২০ বছর আগে দাগ নং ৫৬৯, জেএল নং ১৪৬ মোহর মৌজায় শেয়াল কুড়ি নামক স্থানের ৩শতক জমি আ’লীগ পরিবার হিসেবে এলাকা পরিচিত মোহর গ্রামের (জীবিত থাকা অবস্থায়) বর্তমানে মৃত সেফাতুল্লাহ মন্ডলের কাছ থেকে গভীর নলকুপের নামে রেজিষ্ট্রী নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি গভীর নলকুপ স্থাপন করেন।
স্থাপনের পর সুষ্ঠ ভাবে সেচ প্রদানের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মোহর (লছিরাম) গ্রামের (জমি দাতা) মৃত সেফাতুল্লালের ভাগিনা আব্দুল মজিদ মন্ডলের নামে অপারেটর নিয়োগ দেয়। পরবর্তিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডলের কন্যা নাজমা পারভীনের নামে অপারেটর নিয়োগ দেয়ার পর থেকে ওই গভীর নলকুপের স্কিমের আওতার কৃষকদের কার্ডের মাধ্যমে জমিতে সুষ্ঠ ভাবে সেচ প্রদান করে আসছিলো।
গত প্রায় ২০ বছরে কৃষকরা কোন দিন কোন কৃষক কোন বিষয়ে কোন প্রকার অনিয়মের অভিযোগ করেননি। গত ৮মাস আগে হঠাৎ কৃষকদের উপেক্ষা করে সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী নেতা মোটা অংকের (ডোনেশন) উৎকোচ নিয়ে মোহর গ্রামের মৃত চান মন্ডলের পুত্র আব্দুস সালামকে অপারেটর নিয়োগ দেয়ার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে বাধ্য করেন। ফলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই সালামকে ওই গভীর নলকুপের অপারেটর নিয়োগ প্রদান করেন। সালাম অপারেটর নিয়োগ নিয়েই শুরু করেন কৃষকদের উপর অত্যাচার।
একাধীক কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গভীর নলকুপটি স্থাপনের ২০ বছর ধরে সুষ্ঠ ভাবে (সেচ দিয়ে) পানি নিয়ে জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ আ’লীগের নেতারা কৃষকদের উপেক্ষা করে এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে কৃষক বান্ধব অপারেটরকে বাদ দিয়ে এলাকায় হুমড়া ছুড়া হিসেবে পরিচিত সালামকে অপারেটর নিয়োগ দেন। নিয়োগ নিয়েই সালাম আ’লীগের নেতাদের নাম ভাংগীয়ে কৃষকদেরকে জিম্মি করে বিঘা ১২শ’টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত জমিতে সেচ (পানি) প্রদান করছেন না। প্রায় প্রতিদিনই জমিতে সেচ দিতে গিয়ে (পানি) কৃষকদেরকে একদিকে যেমন লাঞ্চিত হতে হচ্ছে তেমনি কৃষক বান্ধব আ’লীগ সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
কৃষি বান্ধব সরকারের সুনাম ধরে রাখতে কৃষকদেরকে অত্যাচারকারী বর্তমান আপারেটর আব্দুস সালামকে বাদ দিয়ে কৃষকদের জমিতে সুষ্ঠ ভাবে সেচ প্রদানসহ শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পূর্বের অপারেটরকে পূনরায় নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ওই গভীর নলকুপের স্কিম ভুক্ত কৃষকরা।
এব্যাপারে অপারেটর আব্দুস সালাম বলেন, দলীয় ভাবে আমাকে অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে, টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই পানি দেয়া হবেনা, সুলতান হাজি একটু বেশী বাড়াবাড়ি করছিলো তাই তাকে শিক্ষা দিয়ে অন্যদেরকে সাবধান করা হয়েছে। এব্যাপারে সুলতান হাজি বলেন, আমরা কৃষক সব সময় তো টাকা থাকে, মাত্র ৫শ’ টাকা বাকি আছে, পরে দিতে চাওয়ায় আমাকে এই ভাবে মারপিট করা হলো, বিচার চাইতে এসে উল্টো আমারই জরিমানা করা হলো। কৃষকদের সুবিধার জন্য পুরাতন অপারেটরকে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
এব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, অপারেটরকে শোকজ করা হয়েছে, এবং বিষয়টি উধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মারপিটের স্বীকার কৃষক সম্মানীয় সুলতান হাজি সম্মানীয় মানুষ, মাত্র ৫শ’ টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তাকে মারপিট করার অভিযোগে অপারেটরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।